স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু : বেতার যোগাযোগের এক বাঙালি পথিকৃৎ (পর্ব-১)

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু

বর্তমান উন্নত বিশ্বে বেতার বা রেডিও যোগাযোগ প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট, আধুনিক রাডার সবই বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে। আজ যেভাবে আমরা অতি সহজেই বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে সহজভাবে সম্পাদন করতে পারছি, ১৫০ বছর পূর্বেও এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। এই বিপ্লবকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে যুগে যুগে কাজ করে গেছেন অনেক মহান বিজ্ঞানী, তাদের মধ্যে বেতার যোগাযোগ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের অন্যতম বিজ্ঞানী হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন একজন বাঙালি বিজ্ঞানী। আমাদের গর্ব স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি বেতার যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশে প্রথম দিকের পথিকৃৎ একজন বিজ্ঞানী। বেতার যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তার অবদান অপরিসীম। ১৮৯৪-১৯০০ সালের মধ্যে তার গবেষণালব্ধ বিভিন্ন পরিমাপ কৌশন (Measurement Techniques) এবং সার্কিট উপাদান (Components)এখনও বিভিন্ন প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানের ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক হর্ণ (Electromagnetic Horn), সার্কুলার ওয়েভ গাইড (Circular Wave Guide), পয়েন্ট-কন্টাক্ট ডিটেকটর (Point Contact Detector), গ্যালেনা (সেমিকন্ডাক্টর) ডিটেকটর তার আমলের পরীক্ষালব্ধ ফল।

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর সংক্ষিপ্ত জীবনী

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৭৫ সালে কলকাতার সেন্ট জাভিয়ার কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৮০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ১ বছরের জন্য, অর্থাৎ ১৮৮০-১৮৮১ সাল পর্যন্ত লন্ডনে মেডিসিন বিষয়ে পড়াশুনা করেন, কিন্তু তার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তিনি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেন নি। এরপর, তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হন এবং ১৮৮৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি ঐ একই বছর তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বিএসসি (BSc) ডিগ্রি লাভ করেন।

দেশে ফিরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং সেখানেই তার গবেষণা চালিয়ে যান। তার গবেষণালব্ধ ফলাফল বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী লর্ড রেলি’র মাধ্যমে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটিতে পাঠানো হতো। উল্লেখ্য যে, লর্ড রেলি, জগদীশ চন্দ্র বসুরক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি গবেষণা কার্যে মেন্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করতেন। তার সুপারিশের উপর ভিত্তি করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় জগদীশ চন্দ্র বসুকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করে।

জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান ইডুকেশনাল সার্ভিস (আইইএস) থেকে ১৯১৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং এমিরেটাস অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হোন এবং একই বছর ভারতবর্ষের প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণার হিসেবে বোস রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে ভারতবর্ষে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রবর্তনকারী হিসেবে বিবেচনা করে হয়ে থাকে। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর, ৭৯ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।

তথ্যসূত্র:

History of Wireless, Tapan K. Sarkar et al., 2006

Leave a Comment

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না। প্রয়োজনীয় ফিল্ডগুলো * চিহ্নিত।

Scroll to Top