ওয়ার্ল্ড রেডিওকমিউনিকেশন কনফারেন্স (WRC) এবং রেডিও রেগুলেশন (RR)- এর ইতিহাস

ইলেক্ট্রিক্যাল টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের পরবর্তী সময়ে মানুষের মধ্যে যোগাযোগের জন্য রেডিও সংকেতের ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে এর পরিসর সীমিত ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এই পরিসর বাড়তে থাকে। ১৯০১ সালে গুগলিয়েলমো মার্কোনি প্রথম একমুখী ট্রান্সআটলান্টিক (আটলান্টিক মহাসাগরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে) রেডিও সংকেত প্রেরণ করেন। এই যোগাযোগ ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল।

তবে, রেডিওতে শুধু সংকেত নয়, মানুষের কণ্ঠস্বরও শোনা যাবে—এটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন অউব্রে ফেসেনডেন (Aubrey Fessenden) নামে একজন মার্কিন বিজ্ঞানী । তিনি ১৯০০ সালে মানুষের কণ্ঠস্বর প্রথমবার রেডিওতে পাঠাতে সক্ষম হন এবং ১৯০৬ সালে তিনি প্রথমবারের মত তার ভায়োলিনে ক্রিস্টমাসের সঙ্গীত এবং বাইবেলের শেষ শ্লোক তার কন্ঠে গেয়ে সম্প্রচার করেছিলেন যা সমুদ্রে থাকা জাহাজের নাবিকদের বিস্মিত করে দিয়েছিল। এই সঙ্গীত এবং মানুষের কন্ঠস্বর সম্প্রচার প্রায় আটলান্টিক থেকে ক্যারিবিয়ান সাগর পর্যন্ত শুনা গিয়েছিলো।

কিন্তু রেডিও যোগাযোগ যখন বাণিজ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছালো, তখন পুর্বের ইলেকট্রিক্যাল টেলিগ্রাফ লাইনের মতো আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিল।

যেমন, ১৯০২ সালে প্রুশিয়ার প্রিন্স হেনরি যখন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ শেষে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ফিরছিলেন, তিনি জাহাজ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের কাছে একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বার্তাটি যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র তীরে থাকা রেডিও স্টেশন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, কারণ জাহাজ এবং সমুদ্র তীরের রেডিও যন্ত্রপাতি ছিল ভিন্ন কোম্পানি ও ভিন্ন প্রযুক্তির।

এই সমস্যাটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় যে, ১৯০৩ সালে জার্মান সরকার বার্লিনে একটি প্রাথমিক রেডিও সম্মেলনের আয়োজন করে। এর উদ্দেশ্য ছিল রেডিও টেলিগ্রাফির জন্য আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন প্রণয়ন করা।

পরবর্তী সময়ে, ১৯০৬ সালে বার্লিনে প্রথম “আন্তর্জাতিক রেডিওটেলিগ্রাফ সম্মেলন” অনুষ্ঠিত হয় যা বর্তমানের “ওয়ার্ল্ড রেডিওকমিউনিকেশন কনফারেন্স (WRC)” নামে পরিচিত। এতে ২৯টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এই সম্মেলন পরিচালনার জন্য আইটিইউ’র একটি ব্যুরো কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করবে। পরবর্তীতে ১৯০৭ সালের ১ মে থেকে রেডিওটেলিগ্রাফ শাখা কার্যক্রম শুরু করে, যা বর্তমানের রেডিওকমিউনিকেশন ব্যুরো। এই ব্যুরো বর্তমানে WRC আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকে।

আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

১৯০৬ সালের ঐ সম্মেলনে একটি আন্তর্জাতিক রেডিওটেলিগ্রাফ কনভেনশন তৈরি হয় এবং প্রথম রেডিও যোগাযোগের নিয়মাবলি সংযুক্তি আকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে আরও অনেক সম্মেলনের মাধ্যমে এই নিয়মাবলিগুলো সম্প্রসারিত, পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধিত করে ০৪ টি ভলিউমে বিভক্ত করা হয়েছে। সবগুলো ভলিউম একত্রে “রেডিও রেগুলেশন” নামে পরিচিত।

সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত “WRC-23”-এ রেডিও রেগুলেশন হালনাগাদ করা হয়েছে। পরবর্তী “WRC-27” ২০২৭ সালে অনুষ্ঠিত হবে।

রেডিও রেগুলেশন (২০২৪ সংস্করণ) মূলত চারটি ভলিউমে বিভক্ত, যা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামের সুষ্ঠু ব্যবহার, স্যাটেলাইট অরবিট ব্যবস্থাপনা, এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেঃ

ভলিউম ১: Articles

ভলিউম ২: Appendices

ভলিউম ৩: Resolutions and Recommendations

ভলিউম ৪: ITU-R Recommendations incorporated by reference

ডাউনলোড লিংক : https://www.itu.int/hub/publication/r-reg-rr-2024/

তথ্যসূত্র :

Overview of ITU’s History, ITU White Paper

George A. Codding, The International Telecommunications Union: 130 Years of Telecommunications Regulation, 23 Denv. J. Int’l L. & Pol’y 501 (1995)

Leave a Comment

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না। প্রয়োজনীয় ফিল্ডগুলো * চিহ্নিত।

Scroll to Top