আনলাইসেন্সড (Unlicensed) ব্যান্ডের ওয়াকিটকিকে এসবিআর ওয়াকিটকি (SBR Walkie Talkie) বলা হয়ে থাকে। SBR এর পূর্ণ অর্থ হলো: Short Business Radio। এটি স্বল্প দূরত্বে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত শহুরে এলাকায় ৭০০-৮০০ মিটার এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ফাঁকা জায়গায় ১ কিঃমিঃ পর্যন্ত এসবিআর ওয়াকিটকি এর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
বিটিআরসি থেকে এসবিআর ওয়াকিটকি লাইসেন্স প্রাপ্তিতে কি কি প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র লাগবে, কতদিন সময় লাগবে, কি পদ্ধতিতে আপনার আবেদন পত্রের কাজ হবে, লাইসেন্স বাবদ কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তা আজ আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো।
এসবিআর ওয়াকিটকি (SBR Walkie Talkie) এর ব্যবহারক্ষেত্র
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, গার্মেন্টস, নির্মাণ সাইট, ছোট অফিস/প্রতিষ্ঠান, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এসবিআর ওয়াকিটকি এর ফ্রিকোয়েন্সী বা তরঙ্গ পরিসর
এসবিআর ওয়াকিটকি’র ফ্রিকোয়েন্সী বা তরঙ্গ = ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ ; এবং সর্বোচ্চ পাওয়ার আউটপুট = ১ ওয়াট।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, এই ব্যান্ডের ওয়াকিটকি’র তরঙ্গ শেয়ার্ড বেসিস ব্যবহার করতে হবে অর্থাৎ যে সকল প্রতিষ্ঠান এসবিআর ক্যাটেগরীর লাইসেন্সের আওতায় থাকবে তারা সবাই এই ফ্রিকোয়েন্সী ব্যবহার করতে পারবে। নির্দিষ্ট কারো মালিকানায় এই ফ্রিকোয়েন্সী থাকবে না। এই ফ্রিকোয়েন্সীর বিশেষ সুবিধা হলো এই যে, এটি ব্যবহার করতে কোন প্রকার চার্জ প্রদান করতে হয় না।
এসবিআর ওয়াকিটকি এর চার্জ
প্রতি বছর প্রতিটি ওয়াকিটকির জন্য ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা, ওয়াকিটকির লাইসেন্স ফি এর জন্য ১০০/- (একশত) টাকা এবং ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হবে।
অর্থাৎ, ০১ টি ওয়াকিটকির ০১ বছরের চার্জ হবে সর্বমোট [(৫০০+১০০)=৬০০+১৫%]= ৬৯০/- (ছয়শত নব্বই) টাকা।
এসবিআর ওয়াকিটকি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন প্রক্রিয়া
প্রথমে মনে রাখতে হবে যে, কোন ব্যক্তির অনুকূলে ওয়াকিটকির লাইসেন্স প্রদান করা হয় না। এই লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আপনাকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশে ব্যক্তি হিসেবে ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে এ্যামেচার রেডিও লাইসেন্সধারী হতে হবে।
এসবিআর ওয়াকিটকি’র লাইসেন্স প্রাপ্তির ধাপসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
ধাপ-১। নিম্নোক্ত কাগজ-পত্রাদি সংযুক্তি সহ চেয়ারম্যান, বিটিআরসি বরাবর অনলাইনে আবেদন করতে হবেঃ আবেদনের লিংক
- সংস্থা/কোম্পানীর লেটার হেড প্যাডে সংস্থা/কোম্পানীর প্রধানকে আবেদন করতে হবে।
- বেতার যন্ত্রের দরখাস্ত ফর্মের ফি ৫০০/-(পাঁচশত) টাকা এবং দরখাস্ত প্রক্রিয়া করনের ফি ৫০০০/-(পাঁচ হাজার) টাকা + ১৫% ভ্যাট, অর্থাৎ সর্বমোট ৬,৩২৫/- (ছয় হাজার তিনশত পঁচিশ) টাকা যে কোন তফসিল ব্যাংকে গিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর অনুকলে পে-অর্ডার/ডিডি এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এইটা অফেরৎ যোগ্য টাকা, অর্থাৎ আবেদন করতে গেলে এই টাকা আপনাকে পরিশোধ করতেই হবে।
- বিটিআরসি’র নির্ধারিত দরখাস্ত ফরমটি পূরণ করে জমা প্রদান করতে হবে। এসবিআর ওয়াকিটকি লাইসেন্স আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন।
- বেতার যন্ত্র ব্যবহারের নেটওয়ার্ক প্ল্যান, অর্থাৎ আপনি কোন কোন জায়গায় কতগুলো ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, তার সচিত্র বিবরণী।
- হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের কপি, আয়কর প্রত্যয়ন পত্র, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত অনুলিপি।
- এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, আপনি কালো রঙের ওয়াকি-টকি সেট আমদানি ও ব্যবহার করতে পারবেন না, বিধায় কালো ব্যাতিত অন্য কোন রঙের ওয়াকিটকি সেটের রঙিন বুকলেট/ব্রুশিয়রের (জেনারেল স্পেসিফিকেশান্স) জমা দিতে হবে। যেন বুঝা যায় এটি কোন রঙয়ের ওয়াকিটকি।
- কালো রঙের ওয়াকি-টকি সেট আমদানি ও ব্যবহার করবেনা মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে। এই অঙ্গীকারনামা আপনার প্রতিষ্ঠানের লেটারহেড প্যাডে প্রিন্ট করতে হবে।
ধাপ-২। কাগজ-পত্রাদি সঠিক অনুমেয় হলে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ওয়াকিটকি ব্যবহারের চার্জ বাবদ ডিমান্ড নোট জারি করা হয়। ডিমান্ড নোট বলতে বুঝায়, এটি একটি আনুষ্ঠানিক পত্র যেখানে ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে হলে কি পরিমাণ সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে তার পরিমাণ এবং কি পদ্ধতিতে পরিশোধ করতে হবে তার নির্দেশনা উল্লেখ করা থাকে।
ধাপ-৩। এরপর ডিমান্ড নোটের রাজস্ব যে কোন তফসিল ব্যাংকে গিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর অনুকলে পে-অর্ডার/ডিডি এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
ধাপ-৪। একটি ফরওয়ার্ডিং লেটার, পে-অর্ডার/ডিডি এবং ডিমান্ড নোট এর প্রত্যেকটির (০৩) তিন কপি সংযুক্ত কতে বিটিআরসি’র প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দাখিল করতে হবে। (বিটিআরসি প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা – প্লট#ই-৫/এ, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭)।
ধাপ-৫। ডিমান্ড নোটের রাজস্ব পরিশোধের পরে দাখিলকৃত পত্রের Received কপি অনলাইন পদ্ধতিতে বিটি আরসি’র নির্ধারিত ওয়েব-পোর্টালে দাখিল করতে হবে। আবেদনের লিংক ধাপ-১ দ্রঃ।
ধাপ-৬। এরপর বিটিআরসি থেকে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ওয়াকিটকি আমদানি এবং ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হবে। এছাড়াও, ওয়াকিটকি ব্যবহারের নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য যে, প্রতি বছর ওয়াকিটকি ব্যবহারের চার্জ বাবদ একই রকম ডিমান্ড নোট বিটিআরসি থেকে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
এসবিআর ওয়াকিটকি লাইসেন্স করতে কত সময় প্রয়োজন ?
বিটিআরসি’র সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী ০৫ দিনের মধ্যে এই সেবা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে। কাগজ-পত্র সঠিক থাকলে সকল কার্যক্রম শেষ হয়ে লাইসেন্স হাতে পেতে ৩০ দিন সময় লাগতে পারে।
পিএমআর এবং এসবিআর ব্যান্ডের ওয়াকিটকি এর পার্থক্য
বিষয়বস্তু | পিএমআর | এসবিআর |
ফ্রিকোয়েন্সি | ১৩৬-১৭৪ মেগাহার্জ (ভিএইচএফ) ৪০০-৫১২ মেগাহার্জ (ইউএইচএফ) | ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ |
পাওয়ার আউটপুট | সাধারণত ৫ ওয়াট | সর্বোচ্চ ১ ওয়াট |
ফ্রিকোয়েন্সি চার্জ | আছে | নাই |
সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স | আছে | নাই |
ওয়াকিটকির রঙ | যে কোন রঙ | কালো ব্যতীত |
লাইসেন্স প্রাপ্তির সময় | বেশি | কম |
ওয়াকিটকির প্রকারভেদ সম্পর্কে আরোও জানুন……
সতর্কতা
১। মনে রাখতে হবে, ওয়াকিটকি দেশের কোন দোকান থেকে ক্রয় করা যাবে না। এইভাবে ক্রয়কৃত ওয়াকিটকি অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।
২। ওয়াকিটকি নিজে বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারবেন অথবা ওয়ার্ক অর্ডার (Work Order) প্রদানের মাধ্যমে বিটিআরসি’র তালিকাভূক্ত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করতে হবে।
৩। আমদানি করার পর কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বিটিআরসি থেকে নিতে হবে। তাহলেই সেইটা কেবলমাত্র আমাদনি করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হবে।
৪। ওয়াকিটকি ভাড়া হিসেবে নিয়ে ব্যবহার করাও অবৈধ।
৫। ওয়াকিটকি ব্যবহার করার সময় ফ্রিকোয়েন্সি সংক্রান্ত সকল নিয়ম ও শর্ত মেনে চলতে হবে।
যদি কোনো পরিবর্তন বা নতুন ডিভাইস যোগ করতে হয়, তাহলে সেটির জন্য নতুন করে অনুমোদন নিতে হবে।
অনুমোদন ব্যতীত ওয়াকিটকি ব্যবহারের ঝুঁকি
অনুমোদন ব্যতীত ওয়াকিটকি ব্যবহার করলে আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে হতে পারে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি’র অনুমোদন ব্যতীত ওয়াকিটকি সহ যেকোন বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার দন্ডনীয় অপরাধ। বিটিআরসি বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করতে পারে এবং জরিমানাও করতে পারে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ (সংশোধিত-২০১০) অনুযায়ী কারাদন্ড, অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিটিআরসি থেকে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন নিরাপত্তার কাজে ব্যাবহার করব